শরণ এবং গ্রীষ্মা: এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের কাহিনি
২০২২ সালের অক্টোবরে কেরালার একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ২৪ বছর বয়সী গ্রীষ্মা এস এস (Greeshma S.S.) তার ২৩ বছর বয়সী প্রেমিক শরণ রাজ (Sharon Raj)-কে বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করেন। কেরালার নেয়্যাটিনকারা অতিরিক্ত জেলা আদালত এই অপরাধের জন্য গ্রীষ্মাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
পরিচিতি ও সম্পর্কের প্রেক্ষাপট
শরণ এবং গ্রীষ্মার মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবে, গ্রীষ্মা একইসঙ্গে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে বাগদান সেরে ফেলেছিলেন। শরণ এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাননি, তাই গ্রীষ্মা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন
২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর, শরণ তার প্রেমিকা গ্রীষ্মার বাড়িতে দেখা করতে যান। সেখানে গ্রীষ্মা তাকে এক ধরনের আয়ুর্বেদিক ওষুধের সাথে বিষ মিশিয়ে পান করান। বিষের প্রভাব ধীরে ধীরে তার শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
২৫ অক্টোবর, ১১ দিন ধরে অসুস্থ থাকার পর শরণ হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তার পরিবারের সদস্যদের জানান যে, গ্রীষ্মার দেওয়া পানীয় পান করার পরই তিনি অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন।
আইনি প্রক্রিয়া ও রায়
তদন্তে বেরিয়ে আসে যে, গ্রীষ্মা পূর্বপরিকল্পিতভাবে শরণকে হত্যা করেছেন। আদালত তার অপরাধকে "বিচারের অতীত নিষ্ঠুরতা" হিসেবে অভিহিত করে এবং মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে।
অন্য অভিযুক্তদের ভূমিকা
- গ্রীষ্মার কাকা, নির্মলাকুমার নাইর, প্রমাণ নষ্ট করার অপরাধে তিন বছরের কারাদণ্ড পান।
- গ্রীষ্মার মা, সিন্ধু, প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত হলেও পরবর্তীতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন।
গ্রীষ্মার আপিল এবং মামলার বর্তমান অবস্থা
মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর গ্রীষ্মা কেরালা হাইকোর্টে আপিল করেন। তিনি দাবি করেন যে,
১. তার বিরুদ্ধে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
2. মামলার বিচার সঠিকভাবে পরিচালিত হয়নি।
হাইকোর্ট আপিল গ্রহণ করেছে এবং মামলার নথি পর্যালোচনা করছে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই হত্যাকাণ্ড কেরালা তথা পুরো ভারতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। অনেকে মনে করেন, গ্রীষ্মার জন্য মৃত্যুদণ্ড যথাযথ শাস্তি। অন্যদিকে, কিছু মানুষ শাস্তির পরিবর্তে তার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন।
উপসংহার
শরণ-গ্রীষ্মার ঘটনা ভালোবাসা, প্রতারণা এবং বিশ্বাসঘাতকতার এক চরম উদাহরণ। এই ঘটনা আমাদের শেখায় যে, সম্পর্কের মধ্যে প্রতারণা কতটা ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ভারতের আইন আবারও প্রমাণ করল যে, অন্যায় করলে তার যথাযথ শাস্তি পেতেই হবে।
For a more detailed overview of the case, you can watch the following video:
Comments